আবাদি বা ফসলি জমিতে কোনো শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যাবে না এমনই নিদের্শনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবাদি জমি ক্রয় করে তবে সে জমিতে কেবলমাত্র কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারবে-এমনই দিক নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
তবে সরকারি এ নিদের্শনার মাঝেই দিঘলিয়া উপজেলার দক্ষিণ আড়ংঘাটা থানাধীন বাইপাস সড়কের পাশে আবাদি জমি ক্রয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে জুট টেক্সাটাইল মিলস্ লিমিটেড (ইউনিট-৪)। যা মন্ডল জুট মিলস্ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এ শিল্প কারখানা গড়ে তোলার ফলে দেয়ানা মৌজায় কয়েক বিঘা আবাদি জমির ক্ষতি হচ্ছে যা স্থানীয় জনজীবনের উপর প্রভাব ফেলছে।
দক্ষিণ আড়ংঘাটা বাসিন্দা বাইতুল নাজাত জামে মসজিদের খাদেম ও মুদি ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, যে জমিতে জুট মিল গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে বছরে দুবার ধান হতো। এ মিল তৈরির ফলে ধান চাষ বন্ধ হয়ে গেল।
একই এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, কৃষি জমিতে জুট মিল গড়ে তোলা হলে এখানে আর বসবাস করার কোনো উপায় থাকবে না। ধীরে ধীরে এই মিলের মালিকেরা আশপাশের সকল জমি ক্রয় করে ফেলবে, ফলে আমাদের অন্যত্র চলে যেতে হবে।
আড়ংঘাটা বাইপাস বটতলার বাসিন্দা ৩২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত কুমার মন্ডল বলেন, যেখানে জুট মিল গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে সারা বছর ধান উৎপাদন হতো। সাধারণ মানুষ খেয়ে বাঁচত। এ মিল তৈরির ফলে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার নেই বরং চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাছাড়া এ মিল তৈরির ফলে পাশে বসবাসকারী মানুষের চরম বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। মিলের বর্জ্য ফেলা হবে ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদে খালে। নষ্ট হবে এ খালের পানি ও জীববৈচিত্র্য।
জুট মিলের পিছনে ক্ষুদে খালপাড়ে ক্রয় করা জমির মালিক শাহানা বেগম বলেন, ‘প্রায় এক বছর যাবৎ মিলটি তৈরি হচ্ছে। এ মিল তৈরির ফলে আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ব। পরিবেশ ভারী হয়ে উঠবে। বাতাসে ধূলা ছড়াবে। হয়তো বা আমি আর এখানে বসবাস করতে পারব না। মিলের মালিকেরা আস্তে আস্তে সব জায়গা কিনে নেবে।’
মিলের চারপাশের জমির মালিকরা কেউই খুশি নয় এ মিলটি করা নিয়ে। তারা বলছেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন এ মিলটি গড়ে উঠলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। এক পর্যায়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে এই এলাকায়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষি জমিতে আর কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান যেন গড়ে না ওঠে, সে দিকে নজর রাখতে।
দিঘলিয়া উপজেলা আড়ংঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের আয়তন ২.৬ বর্গ মাইল। লোক সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৭২ জন। অধিকাংশ কৃষি নির্ভর।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান জিবলু বলেন, ‘আমার এলাকায় কোনো শিল্প কল কারখানা নেই। এলাকার বেকার যুবকদের কথা বিবেচনা করে ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দিঘলিয়া উপজেলার আয়তন ৮৬.৫২ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী লোকসংখ্যা এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৭ জন। লোক সংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এক হাজার ৪৯৮ জন। মোট জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। মোট ফসলি জমি ৯ হাজার ৪৬০ হেক্টর। এক ফসলি জমি ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর। দুই ফসলি জমি ৩ হাজার ১৯৫ হেক্টর। তিন ফসলি জমি ২৩০ হেক্টর। বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা ২৪ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। কৃষি সমবায় সমিতি ৬১টি এবং কৃষি ও সেচ সমবায় সমিতি ৭টি। এ পরিসংখ্যন বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে নেয়া।
সমাজ ও পরিবেশ সুরক্ষা গণ কমিশন খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রয়েছে। কৃষি জমিকে ব্যবহার করে অপরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন করা যাবে না। শিল্পজোন গঠন করেই শিল্প কল কারখানা করা উচিত। আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণে কৃষি জমিতে একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে বলে মনে করেন তিনি।